স্কুলশিক্ষক থেকে রাজনীতিবিদ। ৩৯ বছরের শিক্ষকতা শেষ করে রাজনীতিতে আসা নারায়ণ চন্দ্র চন্দ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবার তিনি পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি পেতে পারেন। সোমবার (১ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে যে, মঙ্গলবার তাকে বঙ্গভবনে যেতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বঙ্গভবনে হয়তো পূর্ণমন্ত্রী হিসেবেই শপথ নেবেন এই প্রতিমন্ত্রী।
খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া- ফুলতলা) আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের মৃত্যুর পর চন্দ পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন, সোমবার দুপুরের পর এ খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। এদিন সন্ধ্যায় নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। এসময় তাকে বেশ উচ্ছ্বসিত মনে হয়েছে।
বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি প্রথমেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিধাতার প্রতি। কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এলাকার ভোটারদের প্রতি। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শফিউল আলম ফোনে আমাকে জানিয়েছেন যে, কাল মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় যেন আমি বঙ্গভবনে উপস্থিত থাকি।’ কেন উপস্থিত থাকতে বলেছেন তা তিনি (শফিউল আলম ) প্রকাশ করেননি বলেও জানান নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
মঙ্গলবার যদি তিনি পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান, তাহলে তার প্রথম কর্মপরিকল্পনা কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমেই গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে যাবো। শ্রদ্ধা জানাবো মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি। পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে আমার প্রথম দায়িত্ব হবে সরকারের সাফল্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এ মন্ত্রণালয়ের অনেক সফলতা এসেছে গত চার বছরে। এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে এবং এটিই হবে আমার প্রথম কাজ।’
এক সময়ের মানুষ গড়ার কারিগর এখন দেশগড়ার কারিগর হিসেবে পরিচিত নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘আজ আমার এই অবস্থানের জন্য এলাকার জনসাধারণের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে একজন শিক্ষক থেকে মন্ত্রী বানিয়েছেন। আমি ৩৯ বছর শিক্ষকতা শেষে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতিতে এসেছি। সত্যিই যদি আমি কাল পূর্ণমন্ত্রী হই,তাহলে তা হবে আমার রাজনৈতিক জীবনে পাওয়া সবচেয়ে বড় উপহার।’ তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালন করার চেষ্টা করেছি। আগামীতেও তা করবো।’ বাকি পরিকল্পনা বঙ্গভবন থেকে ফিরে এসে বলবেন বলেও জানান নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
নারায়ণ চন্দ্র চন্দ’র জীবনী
নারায়ণ চন্দ্র চন্দ’র জন্ম ১৯৪৫ সালের ১২ মার্চ। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার উলা গ্রামের কালিপদ চন্দের মেঝো ছেলে তিনি। তার মায়ের নাম রেনুকা বালা চন্দ। স্ত্রী ঊষা রানী চন্দও পেশায় একজন শিক্ষক। চার সন্তানের জনক নারায়ণ চন্দের তিন ছেলে ও এক মেয়ে।
নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ১৯৬১ সালে ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন। ১৯৬৩ সালে দৌলতপুর বিএল কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৬৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স এবং ১৯৬৭ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। এর পরপরই তিনি ডুমুরিয়া সাহস নোয়াকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
১৯৭৩ সালের ৭ মে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ খুলনার ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এই বিদ্যালয় থেকেই তিনি মেট্রিক পাস করেছিলেন। তার প্রচেষ্টায় ১৯৭৪ সালে ডুমুরিয়া স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র চালু হয়। এর আগে এই এলাকার পরীক্ষার্থীদের খুলনা শহরে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হতো। শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পরপরই তিনি সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন থানা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। তিনি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালে চন্দ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি ২০০৫ সালের ১১ মার্চ শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
ছাত্রজীবন শেষ করে ১৯৬৭ সালেই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগের থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। ১৯৮৪ সালে তিনি থানা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদণ হন। ১৯৯৫ সালে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্বশেস তিনি ২০০৩ সালে গঠিত উপজেলা কমিটিতেও সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। সেই থেকে আজও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলেছেন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ।
বাংলাদেশে প্রথম অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে তিনি ডুমুরিয়া উপজেলার ভাণ্ডারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ পদে তিনি ছয় বার নির্বাচিত হন। সেই সময়কালের সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহউদ্দিন ইউসুফের মৃত্যুর পর ২০০০ সালের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ওই আসনের উপ- নির্বাচনে নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে ডুমুরিয়া-ফুলতলা আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি চারদলীয় জোটের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় একই আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হন। এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয়, পরিশ্রমী হিসেবে পরিচিত নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় একই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন।
এদিকে তার নির্বাচনি এলাকা ডুমুরিয়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আজাহার আলী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, দলের জন্য নিবেদিত ও পরিশ্রমী একজন সংগঠক নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। তিনি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ডুমুরিয়া ও ফুলতলায় তার মেয়াদকালের গত পাঁচ বছরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছেন।-বাংলা ট্রিবিউন
পাঠকের মতামত